-

ইতালি যেতে কত টাকা লাগে? বেতন কত? ভিসা আবেদন করার নিয়ম এবং খরচ

ইতালি পশ্চিম ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত একটি উন্নত দেশ। এছাড়া ইতালি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। ইতালির রাজধানীর নাম রোম। বর্তমানে ইতালিতে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী যাচ্ছে। কারণ এখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশী বেতন পাওয়া যায়। এছাড়া সেনজেন ভিসা ব্যবহার করে ইতালিতে প্রবেশ করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অনেক প্রবাসী ইতালিতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে টাকা উপার্জন করছে। আপনি যদি ইতালিতে যেতে চান তাহলে ইতালি যেতে কত টাকা লাগে? বেতন কত? ভিসা আবেদন করার নিয়ম এবং খরচ ইত্যাদি সকল বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান থাকা জরুরি। আজকের আর্টিকেলে আমরা এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। দেরী না করে চলুন আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করি।

ইতালিতে যেতে কত টাকা লাগে

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মানুষ বিভিন্ন কারণে ইতালিতে যায়। আপনি কোন উদ্দেশ্যে এবং কোন ভিসা নিয়ে যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার মোট খরচ কত হবে। ইতালি ভিসা সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। প্রথমটি হলো সিজোনাল ভিসা এবং দ্বিতীয়টি হলো নন সিজোনাল ভিসা। আপনি যদি সাময়িক সময়ের জন্য  অর্থাৎ ২ থেকে ৩ মাসের জন্য ইতালিতে যেতে চান সেক্ষেত্রে সিজোনাল ভিসা নিতে পারেন। এই ভিসা নিলে বর্তমানে সকল খরচ মিলিয়ে সাধারণত ৪ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। অপরদিকে দীর্ঘদিন থাকার জন্য অথবা কাজ করার জন্য যেতে চাইলে আপনাকে নন সিজোনাল ভিসা নিতে হবে। এক্ষেত্রে ৯-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

ইতালিতে বেতন কত?

আপনি কত বেতন পাবেন তা নির্ভর করবে আপনি কোন ধরনের কাজ করছেন। ইতালিতে পরিশ্রমী কাজের অনেক মুল্যায়ন করা হয় তাই পরিশ্রমী কাজের জন্য বেশি টাকা উপার্জন করা যায়। তবে ইতালিতে সাধারণত কমপক্ষে ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লাখ বা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পাওয়া যায়। কাজের দক্ষতার উপর নির্ভর করে এই বেতন আরোও বাড়তে পারে।

ইতালি ভিসা করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?

ইতালিতে বিভিন্ন ভিসার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র লাগতে পারে। এছাড়া ভিসার উপর নির্ভর করে কোনো বিষয়ে দক্ষতা থাকতে হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ইতালিতে যাওয়ার জন্য যে যে ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

ইতালি স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আপনার নিম্নোক্ত কাগজপত্র দরকার হবে:-

১. একটি অনুমোদিত ডিজিটাল পাসপোর্ট

২. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র

৩. জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম নিবন্ধন

৪. ইতালীয় প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অফার লেটার

৫. কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সনদপত্র

৬. IELTS এর স্কোর এবং সনদপত্র

৭. ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম

৮. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদপত্র

ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

কাজ করার উদ্দেশ্যে ইতালিতে যেতে চাইলে আপনার নিম্নোক্ত কাগজপত্র লাগতে পারে।

১. অনুমোদিত ডিজিটাল পাসপোর্ট

২. মেডিক্যাল রিপোর্ট

৩. জন্ম নিবন্ধন পত্র এবং জাতীয় পরিচয় পত্র

৪. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

৫. ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম

৬. কোভিড-১৯ এর সনদপত্র

৭. কোম্পানি থেকে পাওয়া স্পন্সরের সত্যয়িত পত্র

এছাড়া অন্যান্য ভিসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র লাগতে পারে। বাংলাদেশ থেকে সাধারণত সবাই উপরোক্ত ভিসায় মানুষ ইতালিতে ভ্রমণ করে।

ইতালি ভিসা কত প্রকার?

ইতালি ভিসা মুলত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। সিজোনাল ভিসা এবং নন সিজোনাল ভিসা। এর মধ্যে আবার বিভিন্ন ধরনের প্রকারভেদ রয়েছে। এই প্রকারভেদ গুলো মুলত যে উদ্দেশ্যে ইতালিতে যাওয়া হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। নিচে কয়েকটি প্রধান ভিসার প্রকারভেদ উল্লেখ করা হলো।

১. ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা

২. ইতালি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

৩. ইতালি কৃষি ভিসা

৪. ইতালি ট্যুরিস্ট ভিসা

৫. ইতালি কনস্ট্রাকশন ভিসা

ইতালি ভিসা আবেদন করার নিয়ম

ইতালি ভিসা আবেদন করার জন্য প্রথমত আপনার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স অবশ্যই থাকতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং যোগ্যতা নিয়ে আপনাকে ইতালি এম্বাসিতে যোগাযোগ করতে হবে। সাথে অবশ্যই মেডিকেল রিপোর্ট এবং ডিজিটাল পাসপোর্ট রাখবেন। উল্লেখ্য যে পাসপোর্ট অবশ্যই ডিজিটাল হতে হবে এবং কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে। সরকারি ভাবে যেতে চাইলে আপনি সরাসরি এম্বাসিতে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া আরোও সাহায্যের জন্য কোনো ইতালীয় প্রবাসীর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ইতালির টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী ১ ইতালীয় ইউরো বাংলাদেশী ১১৬.৭১ টাকার সমতুল্য। তবে ইউরোর মান সর্বদা পরিবর্তন হতে থাকে। সাধারণত ১১০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ইতালীয় ইউরোর মান ওঠানামা করে। এছাড়া আপনি যে ব্যাংক থেকে টাকা পাঠাবেন সেই ব্যাংকে টাকার মান নির্ধারিত করা থাকতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায়

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় সহজে ইতালী যাওয়া যায়। সরকারি ভাবে গেলে আপনি তুলনামূলক কম খরচে ইতালি যেতে পারবেন। এছাড়া সরকারিভাবে গেলে অতি দ্রুত কাজ পাওয়া যায়। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে চাইলে অবশ্যই একটি বৈধ্য এবং ডিজিটাল পাসপোর্ট তৈরী করতে হবে। এরপর কত খরচ হবে সেই বিষয়ে জানতে হবে যা আমরা উপরে আলোচনা করেছি। প্রয়োজনীয় কাগজ সহ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসা অনুমোদন পেলে আপনি ইতালিতে যেতে পারবেন। ইতালি এম্বাসি কখনো কখনো বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া ইতালিতে বসবাসকারী কোনো প্রবাসীর সাথে কথা বলতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা

ইতালি যেতে কত টাকা লাগে, বেতন কত, ভিসা আবেদন করার নিয়ম এবং খরচ ইত্যাদি সকল বিষয়ে আমরা উপরে আলোচনা করেছি। আপনি যদি ইতালিতে একবার যেতে পারেন তাহলে প্রচুর টাকা উপার্জন করতে পারবেন। তবে ইতালিতে যেতে হলে আপনাকে অনেক টাকা খরচ করতে হবে। তাই সামর্থ্য থাকলে তবেই ইতালিতে যাওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আজ এই পর্যন্তই। এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করুন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

সর্বশেষ প্রকাশিত