-

গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সহজ সমাধান – Bangla Health Tips

Bangla Health Tips: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি খুব পরিচিত নাম। চিকিৎসকেরা যদিও দুটোর মধ্যে পার্থক্য করেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে বুক জ্বলা বা পেট ফাঁপা মানেই গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি। গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা আমাদের দেশে খুবই স্বাভাবিক ব্যপার। অনেককে বছরের প্রায় সময়ই ভূগতে হয় এ সমস্যায়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর প্রতিকার হিসাবে পাওয়া যায় অনেক নামি দামি ওষুধ। কিন্তু আমাদের হাতের কাছের বিভিন্ন প্রকৃতিক জিনিস দিয়ে যদি করা যায় এর নিরাময়, তাহলে বাড়তি টাকা খরচ করার কি দরকার। নিচে তেমনই কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হল।

পানি : গ্যাসের সমস্যা কমাতে প্রচুর পানি পান করা উচিত। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করা নিশ্চিত করতে হবে। এটি শুধু আপনার গ্যাস্টিকের সমস্যা কমাবে না আরো অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি দেবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।

লেবুর রস : একটি মাঝারী আকৃতির লেবু চিপে রস বের করে নিন। এরবার লেবুর রসের সাথে আধা টেবিল চামচ বেকিং সোডা ও এক কাপ পানি মিশিয়ে নিন। বেকিং সোডা ভালো করে মিশে যাওয়া পর্যন্ত নাড়ুন। এবার মিশ্রণটি খেয়ে নিন। নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথায় সাথে সাথে আরাম পেতে চাইলে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে।

রসুন : রসুন গ্যাসের জন্য খুবই উপকারি। রসুন শুধুমাত্রই খাবারে অন্য স্বাদ আনে না। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে যা হজম করতে সাহায্য করে।

ডাবের পানি : ডাবের পানি খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে এবং সব খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়। এছাড়াও নিয়মিত ডাবের পানি খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় । তাই সম্ভব হলে প্রতিদিন ডাবের পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।

জিরা গুঁড়ো : যে কোনো খাবারে অল্প একটু জিরে গুঁড়ো দিলে খাবারের স্বাদ পরিবর্তনের সঙ্গে ভালো হয়ে যাবে গ্যাসের সমস্যাও।  তাছাড়া, সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস জলে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর করা যায়। এছড়াও এই পাতার রস খেলে খুব তাড়াতাড়ি রোগাও হওয়া যেতে পারে।

আদা : গ্যাস-অম্লের জন্য আদা খুবই উপকারি। ২০০৮ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ গ্যাসট্রোএনটেরেলজি এন্ড হেপ্যাটোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে একটি তথ্য। যে আদা খাওয়ার ফলে হজম খুব তাড়াতাড়ি হয়। পেট যদি খুব তড়াতাড়ি খালি হয়ে যায় তাহলে সেই খালি পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মশলাদার অথবা ভারী কোন খাবার খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে এক কুঁচি আদা খেয়ে নিলে আর কোনও সমস্যাই থাকবে না।

ভেষজ চা : পুদিনা পাতা, ক্যামোমিল, রাসবেরি এবং ব্ল্যাকবেরি একসাথে মিশিয়ে তৈরী ভেষজ চা হজম প্রক্রিয়া অনেক সাহায্য করে। আর হজম প্রক্রিয়া ঠিক থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।

পুদিনা পাতা : পুদিনা পাতা আপনার অম্লতা, গ্যাস ও বমি বমি ভাব থেকে সাথে সাথে মুক্তি দেবে। গ্যাস্টিকের ব্যথা যখন অল্প তখন থেকে অল্প কিছু পুদিনা পাতা মুখে নিয়ে ভাল করে চিবুতে থাকুন। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার ব্যাথা অনেকটা কমে গেছে। এছাড়া এক কাপ পানিতে কয়েকটি পুদিনা পাতা দিয়ে সিদ্ধ করুন। এটি দিনে ২/৩ বার পান করতে পারেন। স্বাদ বাড়াতে এতে মধু যোগ করতে পারেন তবে দুধ দিবেন না।

কালো জিরা : এসিডিটির ব্যথা কমানোর জন্যে কালো জিরা বেশ উপকারী। কালো জিরার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। চায়ে কালো জিরা মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার হয়। কালো জিরার চা বানানোর জন্যে, প্রথমে এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ কালো জিরা বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। এক চামচ মধু মিশিয়ে দুপুরে অথবা রাতের খাবারের পূর্বে এক কাপ কালো জিরার চা হজমে বেশ সাহায্য করে।

আমলকি : আমলকি শরীরের জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। এটি শুধুমাত্র যে হজমেই সাহায্য করে এমন নয়, এটি চুল, পাকস্থলী এবং চামড়ার জন্যেও বেশ উপকারী। প্রতিদিন খালি পেটে আমলকির জুস খেলে সারাদিনের জন্যে শরীরে ব্যাপক শক্তি সঞ্চিত হয়। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা এসিডিটি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে বেশ সহায়ক।

পরিশেষে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাওয়ার অভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রতিদিন দুপুরের এবং রাতের খাবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। রাতের খাবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেয়ে ফেলা উচিত। সকালের নাস্তা বেশ ভালোভাবে করার চেষ্টা করতে হবে। অন্যদিকে দুপুরের আহার একটু হালকা করা বাঞ্ছনীয়। একেবারে খুব বেশি না খেয়ে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর অল্প খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

সর্বশেষ প্রকাশিত