-

বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকতে করণীয়

বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, নদীভাঙন, টর্নেডো, অগ্নিকাণ্ড, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সাম্প্রতিককালে নতুন করে যোগ হয়েছে বজ্রপাত। সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে চলেছে এ নিয়ে জনমনে বড় ধরনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।  বজ্রপাতজনিত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়াতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জনসচেতনতা তৈরিতে কিছু করণীয় ও পালনীয় বিষয় নির্ধারণ করেছে।  চলোন সেই সতর্কতামূলক বার্তা গুলি জেনে নেয়া যাক, তার আগে জেনে নেই বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ গুলো:

বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ

বজ্রপাত হওয়ার আগ মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে কোথায় তা পড়বে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’শব্দ পাওয়ার কথা জানান। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন তাহলে বজ্রপাত হবে এমন প্রস্তুতি নিন।

বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়

  • বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন কালবৈশাখী এবং বর্ষা মৌসুমে বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এসময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন।
  • ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘর থেকে বের হবেন না, অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পড়ে বাইরে যান।
  • বজ্রপাতের সময় ঘরের জানালার কাছাকাছি থাকা যাবে না। জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতর থাকতে হবে।
  • ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না।
  • বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকুন। কিন্তু এ সময় মাটিয়ে শুয়ে পড়া যাবে না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।
  • খোলাস্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে সরে যান।
  • বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ রাখবেন না। সম্ভব না হলে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
  • বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।
  • বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।
  • বজ্রপাতের সময় নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকুন। ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না, তবে এসময় সমুদ্র বা নদীতে থাকলে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।
  • বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। প্রতিটি বিল্ডিং-এ বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
  • বজ্রপাত থেকে বাড়িকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে। ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • বজ্রপাতের সময় মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলো বন্ধ রাখুন।
  • কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত বজ্রপাত নিরোধক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে অবস্থান করুন।



বজ্রপাতে আহত হলে

বজ্রপাতে আহত কাউকে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতোই চিকিৎসা করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে। হাসপাতালে নিতে হবে। একই সঙ্গে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ জরুরি। যা সহজেই জেনে নেয়া যেতে পারে।

বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকতে নিজে জানুন এবং এই পোস্টটি শেয়ার করে অন্যকে জানান।

সর্বশেষ প্রকাশিত